ডেস্ক নিউজ:

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে চাচা-ভাতিজার জমজমাট লড়াই দেখার অপেক্ষায় ছিল রাউজানবাসী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়তো হচ্ছে না। ঋণ খেলাপি হয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থিতা হারিয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন সামির কাদের চৌধুরী।

শুক্রবার আপিল শুনানিতেও প্রার্থিতা ফিরে পেতে ব্যর্থ হন তিনি। ফলে প্রায় ৪০ বছর পর সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পরিবারের কোনো সদস্য সংসদ নির্বাচনে থাকছেন না।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী ফজলে করিম চৌধুরী। প্রার্থিতা বাতিল হওয়া সামির কাদের চৌধুরী ফজলে করিম চৌধুরীর আপন চাচাতো ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে। এ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান জেলা বিএনপির সদস্য জসীম উদ্দিন সিকদার।

বিএনপি নেতারা বলছেন, জসীম উদ্দিনকে দলের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। আপিলেও সামির কাদেরের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় এখন তিনিই বিএনপির ভরসা। তবে উপজেলা বিএনপির এ সদস্য ভোটের মাঠে একেবারেই অপরিচিত মুখ। ভোটের মাঠে দক্ষ ও পুরনো প্রার্থী ফজলে করিমের সঙ্গে বিএনপির এ প্রার্থী কতক্ষণ টিকতে পারবেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এ অবস্থায় দলের বিকল্প প্রার্থীকে জেতাতে না পারলে এ গুরুত্বপূর্ণ আসনটি ঐক্যফ্রন্টের হাতছাড়া হতে পারে-এমন আশঙ্কায় নেতাকর্মীরা।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ২ ডিসেম্বর ঋণ খেলাপি হওয়ায় চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপি প্রার্থী সামির কাদের চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করলেও দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে প্রার্থিতা ফিরে পেতে ব্যর্থ হন তিনি। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বাছাইয়ে টিকে আছেন বিকল্প প্রার্থী জসীম উদ্দিন সিকদার।

উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য জামসেদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামির কাদের চৌধুরীর প্রার্থিতা পরিকল্পিতভাবে বাতিল করা হয়েছে। রাউজানে চৌধুরী পরিবারের কিছু ফিক্সড ভোট আছে। সামির ভাই থাকলে তা পেতে বিএনপির সহজ হতো। আশা করি দল এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’

রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘দলের প্রার্থী হিসেবে সামির কাদের চৌধুরীই নির্বাচন করবেন সেভাবে প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। তবে নির্বাচন কমিশনের আজকের সিদ্ধান্তে হয়তো আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমাদের প্রার্থী আদালতে আবেদন করবেন। আওয়ামী লীগের অনেকে এর চেয়ে বেশি ঋণ খেলাপি হয়ে নির্বাচন করছেন। সরকার মূলত যেকোনোভাবে আমাদের ভালো প্রার্থীদের ভোটের মাঠ থেকে সরাতে তৎপর।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাউজানে প্রার্থী কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করছি। এখানে প্রর্থীর চেয়ে প্রতীক বড়। ধানের শীষ প্রতীক যাকেই দেয়া হোক মানুষ তাকে ভোট দেবে। ইনশাল্লাহ বিজয় আমাদের।’

এদিকে রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী কে হলো তা নিয়ে আমাদের টেনশন নেই। উপজেলা আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সব নেতাকর্মী এমপি ফজলে করিমের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। গত ২২ বছরে রাউজানে ১৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন ফজলে করিম। তাই তার বিজয় সুনিশ্চিত।’

বিগত নির্বাচনের ফলাফল

রাউজান (চট্টগ্রাম-৬) আসনে ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরপর তিনবার নির্বাচিত হন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ১৯৯৬ সাল থেকে চার দফা নির্বাচনে একবার বিএনপি এবং পরের তিনবার আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। ১৯৯৬ সালে বিজয়ী হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। কিন্তু ২০০১ সালে সারাদেশে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির মাঝেও রাউজান থেকে নির্বাচিত হন ফজলে করিম চৌধুরী। যিনি সম্পর্কে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চাচাতো ভাই। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও ফজলে করিম চৌধুরী বিএনপি প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না।